Header Ads

কোন পথে সৌদি আরব

কোন পথে সৌদি আরব ? ?

----Shoriful Islam 

সৌদি আরব ৷ বিশ্বনবী হযরত মুহম্মাদ (সাঃ)এর পদধূলিতে ধন্য ভূমি ৷ লাখ লাখ সাহাবা ও তাবেয়ীনদের জন্ম এই মাটিতেই ৷ হাজারো ইসলামী নিদর্শন ও স্মৃতি বিজড়িত দেশ৷ মহা পবিত্র গ্রন্হ আল- কোরআন এই পূন্যময় ভূমিতেই অবতীর্ণ হয়েছে ৷ শুধু একবার মক্কা -মদিনা দেখা কোটি মানুষের স্বপ্ন ৷ কিন্তু, সেই সৌদি আজ কোন পথে এগুচ্ছে? প্রকৃত ইসলামি বিধান কি সেখানে চালু আছে? সৌদি বাদশাহ আসলেই কি মুসলমানদের কল্যানে কাজ করছে? সৌদিতে হঠাৎ বিরাট পরিবর্তন কেন? ইত্যাদী বিষয় নিয়েই আজকের এই প্রবন্ধ ৷
shorif99

এক.
প্রাচ্য সভ্যতার অনুপ্রবেশ সৌদিতে দিন দিন বেড়েই চলছে ৷ সম্ভবতঃ দুই যুগ পরে সৌদি ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর মাঝে বিরাট কোন তফাত থাকবে না৷ বিশেষতঃ যুব শ্রেণীর মাঝে পশ্চিমাদের প্রতি আকর্ষণ কয়েক মাত্রায় বেশি ৷ ইউরোপের বড় বড় ভার্সিটি গুলোতে সৌদি থেক দলে দলে ছাত্র পাঠানো হচ্ছে৷ হার্ভার্ড ( Harvard University)থেকে শুরু করে অক্সফোর্ড (Oxford University) ভার্সিটির সর্বত্র তাদের পদচারণা ৷ প্রাচ্যের ভার্সিটিগুলো চরমভাবে তাদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে ৷ ফলে, তারা বিষাক্ত চিন্তাধারা নিয়ে দেশে ফিরছে ৷

তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায় যে, অবস্হা কতটা ভয়ংকর ৷ রাসূল (সাঃ)এর শানে বেয়াদবি ও আপত্তিমূলক এমন কিছু লেখছে যা, সাধারণ কোন মুসলমানও সহ্য করতে পারে না ৷
দুই.
সৌদিতে নামাজের সময় বিশেষ এক মন্ত্রনালয়ের(هيئة الامربالمعروف والنهي عن المنكر)পুলিশগণ সবসময় টহল দিতো ৷ দোকান খোলা থাকলে, তা বন্ধ করে দিত ৷ বাজারে বোরকাহীন কোন মহিলা দেখা গেলে, প্রহার করতো ৷ অমুসলিম ও ইউরোপ -আমেরিকা থেকে আগত মহিলারাও এখানে এসে পর্দা করতো ৷ কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ৷
কয়েকদিন আগে সৌদিতে খুব জাঁকজমক পূর্ণভাবে জাতীয় দিবস (اليوم الوطني) পালিত হলো ৷ এ বছরই সর্বপ্রথম মহিলা- পুরুষ একত্রে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে৷ রাস্তায় রাস্তায় বিশেষত রিয়াদে ছেলে-মেয়েদের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে যা, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না৷ মহিলাদেরকে ড্রাইভিংয়ের বৈধতার দেয়ার নামে বেপরোয়া চলাফেরা ও বেহায়াপনা- বেলাল্লাপনা শুরু হয়েছে ৷ নামাজের সময় বিশেষ পুলিশের তৎপরতাও দিন দিন খুব শিথিল হচ্ছে ৷

তিন.
কিয়ামত পর্যন্তই দ্বিনের উপর মজবুত এক জামাত থাকবেন ৷ তাদের উপর প্রতি যুগেই পাহাড়সম মসিবত আসতে থাকবে ৷ বর্তমানে সৌদিতে এমনই দেখতে পাই৷ বাদশাহর বিরুদ্ধে কেউ সামান্য উচ্চবাচ্চ (চাই তা দ্বীনের জন্য হোক বা, অন্য কোন কারনে) করলেই তাকে গুম করে ফেলা হচ্ছে ৷ আবার কাউকে জেলে বন্ধি করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন সময়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত আলেমগণও মুক্তি পাচ্ছেন না ৷ গত কয়েকমাস পূর্বে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় এক প্রিন্সকে (বাদশাহ ফাহাদের ছেলে) গুম করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার মুখলিস আলেম ও দায়ী জেলে আবদ্ধ আছেন৷ এদের মধ্যে প্রায় বিশজন এমন আলেম যারা বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন ৷
কয়েকদিন পূর্বে শায়েখ আব্দুর রহমান আল- আরিফী ও ড.আয়েজ আল-কারনির গ্রেফতারের খবর শুনে খুব ব্যথিত হয়েছি ৷

এছাড়াও খুতবা পাঠেও এসেছে বিভিন্ন বাধ্য বাধকতা ৷ মদিনার বিশিষ্ট বুজুর্গ ইমাম শায়েখ হুজাইফিও এর শিকার হয়েছেন৷ তাঁকেও সরকারের তরফ থেকে লেখা খুতবা পাঠে বাধ্য করা হচ্ছে ৷
চার.
কা'বা শরীফের ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান সুদাইসী হাফিজাহুল্লাহ ,ছোট কাল থেকেই তার তেলাওয়াত শুনে আসছি ৷ কা'বাতুল্লাহর কথা মনে পড়লে, শায়খ সুদাইস সাহেবের কথাও এসে যায় ৷ তাই, তার প্রতি হৃদয়ের টান অনেকটা বেশি ৷ কিন্তু, গত কয়েকদিনে তাঁর কিছু কথা ও কর্মকান্ডে খুব বিস্মিত হয়েছি ৷ 
গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তার বক্তব্যে সারাবিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায় ৷ তিনি বলেন ---
السعودية والولايات المتحدة هما قطبا هذا العالم للتأثير، يقودان بقيادة خادم الحرمين الشريفين والرئيس الأمريكي، العالم والإنسانية إلى الأمن والسلام والاستقرار
অর্থাৎ ,সৌদি বাদশাহ ও ট্রাম্প পুরো বিশ্বকে শান্তি ও নিরাপত্তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে ৷ তাঁর মুখে এমন বক্তব্যে গোটা মুসলিম উম্মহ খুব ব্যথিত হয়েছে ৷

এ বছর হজ্ব অনুষ্ঠানে তার জুমার ভাষণও অনেকটা ব্যতিক্রম ছিল ৷ খুতবার শুরুতে কয়েক লাইন হামদ ও সালাহ ব্যতিত পুরো খুতবাই ছিল সৌদি বাদশাহর প্রশংসা, জিহাদের বিরোধীতা , বাদশাহর বায়াত ভঙ্গ করার শাস্তি , ইঙ্গিতে তুর্কি ও কাতার বিরোধীতা এবং জেলে বন্দী একদল মুখলিস আলেমদের বিভিন্ন সমালোচনামূলক কথাবার্তায় ভর্তি ছিল ৷
এছাড়াও যখন থেকে সুদাইস সাহেবকে হজ্ব বিষয়ক বিভিন্ন কাজের(رئيس أمورالحج) প্রধান বানানো হয়, তখন থেকে হারামাইনে এমন কিছু আমল দেখা যাচ্ছে, যার সাথে সৌদির বড় বড় 
আলেমগনও (هيئة كبارالعلماء) একমত নন ৷

পাঁচ.
ইহুদীরা মুসলমানের চির শত্রু ৷তারা কখনো মুসলমানদের হিতাকাঙ্খী নয় ৷ গোটা বিশ্ব আজ তাদের ব্যাপারে নিরব ৷ অবৈধভাবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রটি আরব বিশ্বের জন্য একটি অভিশাপ ৷ সৌদি আগে তাদের বিরুদ্ধে কিছু উচ্চবাচ্চ করলেও বর্তমানে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে ব্যাস্ত ৷ সৌদিগণ পূর্বে বলতো --
الاسرائيل غاصبة
"ইসরাইল অবৈধভাবে রাষ্ট্র দখলকারী" 
কিন্তু, কয়েকদিন আগে এক সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল - জাবির দুই দেশের মধ্য সম্পর্ক উন্নায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে ৷

ছয়.
সৌদি মুসলামানদের প্রাণ কেন্দ্র ৷ সৌদি আক্রান্ত হলে, গোটা মুসলিম বিশ্বই আক্রান্ত হবে ৷ তাই, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি এই পবিত্র ভূমিকে সকল চক্রান্ত থেকে হেফাজত করেন ৷ বিশেষতঃ হারামাইন শরিফাইন ও রাওজা মোবারককে দুষ্কৃতি কারীদের দুষ্কৃতি থেকে মুক্ত রাখেন ৷ আমিন

সূত্রঃ 
ফকিহুল আসর মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানীর হজ্ব পরবর্তী লেকচার ও সমসাময়ীক কিছু আরবী পত্রিকা ৷

No comments

Theme images by TommyIX. Powered by Blogger.