Header Ads

নামাজির পরিচয়, প্রকার ও প্রতিদান

নামাজির পরিচয়, প্রকার ও প্রতিদান 

মুসলমানের পরিচয় মেলে নামাজের মাধ্যমে। যার নামাজ ঠিক, তার পুরো জীবন ঠিক। নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। 

أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالإِيمَانِ تَرْكُ الصَّلاَةِ 

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান ও কুফরের ব্যবধান হল সালাত (নামায) পরিত্যাগ করা। তিরমিজি : ২৬১৯)

بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ أَوِ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ

 বান্দা ও শিরক বা কুফরের মাঝে ব্যবধান হল সালাত (নামায) পরিত্যাগ করা। তিরমিজি : ২৬২০) 

আর নামাজে অবহেলাকে বলা হয়েছে মুনাফিকের আলামত। সুতরাং নামাজ আদায়ে খুব সতর্ক থাকা চাই। মানুষের নামাজের স্তর ও প্রকার সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

 এসব হাদিস একত্র করে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম জাওজিয়া (রহ.) নামাজিদের পাঁচটি স্তর উল্লেখ করেছেন।


👉১. মুহাকাব অর্থাৎ অমনোযোগী

প্রথম স্তর : প্রথম শ্রেণির নামাজি হচ্ছে ‘মুহাকাব’ অর্থাৎ অনিয়মিত নামাজ আদায়কারী। সুযোগ হলে নামাজ পড়েন কিংবা নামাজ ছেড়ে দেন। কখনো জুমার নামাজে বা বিভিন্ন ওয়াক্তিয়া নামাজে তাদের উপস্থিতি দেখা মেলে। আবার নামাজের সময় বাইরে ঘোরাফেরা করতেও দেখা যায়। এদের অন্তরে নামাজের গুরুত্ব নেই।অনেকটা অবহেলা এবং দায়সারা ভাবে নামাজ আদায় করে। এমনকি সে তার নামাজের অবস্থান সম্পর্কেও অর্থাৎ কিরাত, রুকু, সিজদা, বৈঠক প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন ও নিশ্চিত থাকে না। যারা নামাজ ত্যাগকারী ও সালাত নষ্টকারী, তাদের জন্য পরকালে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।

فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ ﴿4﴾ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿5﴾ (الماعون)
সুতরাং পরিতাপ সেই নামাজিদের জন্য, যারা তাদের সলাতে অমনোযোগী। (সুরা মাঊন:৪-৫)
সালাত বিনষ্টকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন -

فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا. (مريم:59)

তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সলাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মারিয়াম : ৫৯)

👉২. মুহাসাব অর্থাৎ বিভিন্ন চিন্তায় মগ্ন

দ্বিতীয় স্তর : এ প্রকার মুসল্লি হলো ‘মুহাসাব’ অর্থাৎ নিয়মিত নামাজ পড়েন ঠিকই, কিন্তু নামাজে কোনো মনোযোগ থাকে না। তাদের নামাজে খুশু খুজু থাকেনা এবং নামাজের ভেতর তারা বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। মনোযোগ আনার চেষ্টাও করে না। শুধু নামাজ শুরু করে আর শেষ করে। নামাজের মাঝখানে কী পড়েছে আর কী করেছে তার কিছুই সে জানে না। বলা যায়, এই শ্রেণির নামাজির শরীর নামাজ পড়ে, অন্তর নামাজ পড়ে না। এরা নামাজের প্রতি উদাসীনতার জন্য জবাবদিহির শিকার হবেন। দুঃখজনকভাবে সমাজে এই শ্রেণির মুসল্লিই সবচেয়ে বেশি।

اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمۡ ۚ وَ اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَ لَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیۡلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আলাহকে ধোকা দিতে চায়। বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোকায় ফেলেন। আর যখন তারা সলাতে দাড়ায় তখন অলসভাবে দাড়ায়। তারা লোকদেরকে দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা : ১৪২)
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاَةُ
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যদি নামাজ ঠিক থাকে, তাহলে বাকি আমলও ঠিক হবে। আর যদি নামাজ খারাপ হয়, তবে বাকি আমলও খারাপ হবে। [আবু দাউদ ৮৬৪, তিরমিযি ৪১৩, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ইবন মাজাহ ১৪২৫, ১৪২৬, আহমদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১, দারেমি ১৩৫৫]

👉৩. মুকাফফার আনহু অর্থাৎ প্রচেষ্টাকারী

তৃতীয় স্তর : এরা হচ্ছেন ‘মুকাফফার আনহু’ অর্থাৎ এ প্রকারের মুসল্লিরা সব সুন্নত ও রুকন ঠিকঠাক আদায় করে, অন্তরের ওয়াসওয়াসা ও নফসের কুমন্ত্রণা দূর করতেও চেষ্টা করে। এ শ্রেণির মুসল্লিরা সব রুকন ও শর্ত আদায়ের পাশাপাশি মনোযোগ ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু শতভাগ মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হতে পারে না। কখনো মনোযোগ আসে, কখনো গাফেল হয়ে যায়। এরা হলো সেই শ্রেণির মুসল্লি, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নামাজের উসিলায় তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। এই শ্রেণির নামাজি নামাজের মাধ্যমে দায়মুক্ত হবেন এবং সমস্ত গুনাহ থেকে বাচতে পারবে।

وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ 
নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

👉৪. মুসাব অর্থাৎ মনোযোগীঃ

চতুর্থ স্তর : এই শ্রেণি হচ্ছে ‘মুসাব’ অর্থাৎ যারা নামাজের সব হক, রুকন ও সুন্নত আদায় করেন, অন্তরকেও তার সুরক্ষা ও হক আদায়ে লিপ্ত রাখেন, যেন সামান্য সওয়াবও নষ্ট না হয়। যথাযথভাবে নামাজ আদায়ে চেষ্টার সেরাটা ব্যয় করেন। এসব মুসল্লি নামাজের পুরো সময়টাতে খুশুখুজু ও রবের ইবাদতে মগ্ন থাকেন। তার নামাজ আদায় করা আল্লাহ দেখছেন, এটি বারবার মনে জাগ্রত করেন। এই শ্রেণি নামাজের বিনিময়ে যথোপযুক্ত সওয়াব পাবেন।

প্রসিদ্ধ হাদীস ‘হাদীসে জিবরীল’-এ সকল ইবাদতের একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে খুশূ-খুযূর চূড়ান্ত রূপ-

أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنّهُ يَرَاكَ.

ইহসান হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত  এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি তাঁকে না দেখলেও তিনি তো (অবশ্যই) তোমাকে দেখছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০


قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ.

সফলকাম সেসকল মুমিন, যারা সালাতে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করে। -সূরা মুমিনূন ১-২ 


👉৫. মুকাররাব অর্থাৎ আত্মসমর্পিতঃ

পঞ্চম স্তর : এটা হচ্ছে নামাজিদের সর্বোচ্চ স্তর। এদেরকে বলা হয় ‘মুকাররাব’ অর্থাৎ বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। নবীজি যেমন বলেছেন, ‘নামাজ আমার চোখের শীতলতা’। এ প্রকারের মুসল্লিরা অন্তরের সুখ-তৃপ্তি ও আনন্দ নামাজের মাধ্যমে পূর্ণ করেন। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে পার্থিব ও অপার্থিব সব চাহিদা পূরণ করেন, যারা নামাজকে নিজের চোখের শীতলতা বানিয়েছেন। আর বলাই বাহুল্য, দুনিয়ায় যার চোখ নামাজের দ্বারা শীতল হবে, আখেরাতে তার চোখ রবের নৈকট্য পেয়ে শীতল হবে। 
وَ اسۡجُدۡ وَ اقۡتَرِبۡ
সেজদা করো, নিকটবর্তী হও।’ (সুরা আলাক : ১৯)।

No comments

Theme images by TommyIX. Powered by Blogger.